সুউচ্চ অট্টালিকা তৈরির যে গল্প, তার পেছনে সিমেন্টের রয়েছে অশেষ ভূমিকা। একবিংশ শতাব্দীতে এসে সিমেন্টের সাহায্যে ভবন নির্মাণ কৌশলের বিকল্প থাকলেও এখনো সেসব তেমন পরিচিতি লাভ করতে পারেনি। যে কারণে সিমেন্টেই সবচেয়ে বেশি আস্থা রাখছে মানুষ। যার জন্য আমাদের দেশে সিমেন্টের বাজারও বেড়েছে। শুধু রাজধানী ঢাকা বা বড় শহর কেন, সিমেন্টের চাহিদা এখন বাড়ছে প্রত্যন্ত গ্রামেও। তবে আশার কথা হলো, সিমেন্টের এ চাহিদার সিংহভাগ মেটাচ্ছেন আমাদের দেশীয় উদ্যোক্তারা।
দেশের নানা উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি সাধারণ ভবনের নির্মাণকাজে ব্যবহৃত সিমেন্টও আমাদের দেশীয় কারখানায় তৈরি হচ্ছে। গুণগত মান কিংবা সরবরাহের সক্ষমতা বা বিপণন কৌশল, কোনো ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই আমাদের কোম্পানিগুলো। এতে সিমেন্ট খাতে বিদেশী কোম্পানিগুলোর যে বাজার ছিল, তা এখন দেশীয় কোম্পানির দখলে।
সিমেন্টের ব্যবহার প্রথম কারা শুরু করেছিল জানা যায়নি। তবে খ্রিস্টের জন্মেরও তিন হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়ার ভবন নির্মাণে সিমেন্ট বা সমজাতীয় কিছু ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। সেই সময়ে চুনের সঙ্গে ছাই বা ঝামা পাথর মেশানো হতো, যেটা জমাট বাঁধতে সাহায্য করত। তবে এ প্রক্রিয়ার আবিষ্কারক তারা ছিল না। মেসোপটেমিয়ার মানুষ এগুলো ব্যবহার করত। পরবর্তী সময়ে রোমান স্থপতিরা এর মাধ্যমে বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ করেছিল।
মধ্যযুগের কিছু বন্দর আর দুর্গ নির্মাণে সিমেন্ট ব্যবহারের নমুনা পাওয়া যায়। তবে আঠারো শতকে এসে তা অনেক বেশি আধুনিক রূপ লাভ করে। এ সময় পানি নিরোধক সিমেন্টও আবিষ্কৃত হয়। আধুনিক সিমেন্টের আবির্ভাব ঘটে মূলত ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের সময় থেকে।
একটা সময় পর্যন্ত ভবন নির্মাণে পাথরের ব্যবহার ছিল। কিন্তু মানুষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভবনের চাহিদাও বাড়তে থাকে। তাই একসময় বাড়তি পাথরের জোগান দেয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। যে কারণে বাড়ে ইট আর সিমেন্টের ব্যবহার। উনিশ শতকের দিকে হাইড্রোলিক সিমেন্টের আবির্ভাব ঘটে, যেটা বেশ অল্প সময়ের মধ্যেই জমাট বাঁধে। কিন্তু দেখা গেল এ ধরনের সিমেন্টে কাজ করতে গিয়ে বেশকিছু সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
পরবর্তী সময়ে জন স্মেটন যখন ইংলিশ চ্যানেলে তৃতীয় এডিস্টন বাতিঘর (১৭৫৫) নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তখন প্রচলিত সিমেন্টে সেই কাজ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। জন স্মেটনের দরকার ছিল এমন ধরনের সিমেন্ট যেটা দিয়ে প্রবল জোয়ার ঠেকানো যাবে এবং যেটা জমাট বাঁধতে অন্তত ১২ ঘণ্টা সময় নেবে। তাই স্মেটন বাজারে প্রচলিত সব ধরনের হাইড্রোলিক সিমেন্ট নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। নিজের চাহিদা তিনি পূরণ করেছিলেন কাদা আর চুনাপাথরের সংমিশ্রণকে নিয়ন্ত্রণ করে। ১৮১৭ সালে লুই ভ্যাকেটও এ পদ্ধতি অনুসরণ করে ভিন্নধর্মী সিমেন্ট তৈরি করেছিলেন। জেমস ফ্রস্ট নামক এক ব্যক্তিও প্রায় ভ্যাকেটের মতো একই ধরনের সিমেন্ট তৈরি করেন। তিনি সেটার নাম দিয়েছিলেন ‘ব্রিটিশ সিমেন্ট’। পরবর্তী সময়ে জোসেফ অ্যাসপোডিনও বিশেষ ধরনের সিমেন্ট তৈরি করেছিলেন, যেটার রঙ ছিল ইংল্যান্ডের পোর্টল্যান্ড উপকূলের একধরনের দামি পাথরের মতো। এ পাথর পোর্টল্যান্ড নামেই পরিচিত। এর নাম অনুসারে অ্যাসপোডিন তার সিমেন্টের নাম রাখেন ‘পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট’।
আমাদের দেশে অর্থনীতি বরাবরই কৃষিনির্ভর হওয়ায় সিমেন্ট শিল্পের বিকাশ ঘটেছে অনেক পরে। তাছাড়া সিমেন্ট তৈরিতে প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদেরও বেশ অভাব ছিল। যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পের প্রভাব বাড়তে শুরু করে। ফলে বাড়তে শুরু করে সিমেন্টের চাহিদা। এর ধারাবাহিকতায় দেশে প্রথম সিমেন্ট কারখানা হয় ১৯৪১ সালে, সিলেটের ছাতক উপজেলার সুরমা নদীর তীরে। নাম ছিল আসাম বেঙ্গল সিমেন্ট কোম্পানি। পরবর্তী সময়ে এটি ‘ছাতক সিমেন্ট কারখানা’ নামকরণ করা হয়। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসির) অধীনে যায় ছাতক সিমেন্ট। পরে ১৯৭৩ সালে চিটাগাং সিমেন্ট ক্লিংকার অ্যান্ড গ্রাইন্ডিং ফ্যাক্টরি নামের একটি কারখানা হয়, যা বর্তমানে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
১৯৯২ সালে দেশীয় মালিকানায় প্রথম বেসরকারি খাতের সিমেন্ট কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। আর ২০০২ সালে সিমেন্ট খাতে দেশের অন্যতম বড় উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসে আকিজ সিমেন্ট। ফ্লাই অ্যাশবিহীন স্ল্যাগ বেজড সিমেন্ট উৎপাদনে আকিজ সিমেন্ট দেশের অন্যতম পথিকৃৎ, যা দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে রেখে চলছে বিশাল অবদান।
আজকের উন্নত বিশ্ব কিংবা ডিজিটাল বাংলাদেশের সব অবকাঠামো উন্নয়নের পেছনে অন্যতম চালিকাশক্তি সিমেন্ট শিল্প। তবে সিমেন্টের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকার, চুনাপাথর, জিপসাম, স্ল্যাগ ও ফ্লাই অ্যাশ আমদানিতে খরচ বেড়ে যাওয়া এবং এসব পণ্যে অতিরিক্ত কর আরোপ এ শিল্পের উন্নতিতে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া বিবেচনায় বেশ কয়েক ধরনের সিমেন্ট উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট বা ওপিসি, পোর্টল্যান্ড কম্পোজিট সিমেন্ট বা পিসিসি সিমেন্ট বেশি উৎপাদিত হয়। পিসিসি সিমেন্টে ক্লিংকারের পরিমাণ ৬৫-৭৯ শতাংশ, স্ল্যাগ, ফ্লাই অ্যাশ, লাইমস্টোন বা চুনাপাথর ২১ থেকে ৩৫ ভাগ আর জিপসাম থাকে সর্বোচ্চ ০-৫ ভাগ পর্যন্ত।
এছাড়া আকিজ সিমেন্টসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানি রেডিমিক্স উৎপাদন করছে। বর্তমানে আবাসন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে এর চাহিদা অনেক বেশি। কারণ এখানে নির্মাণকারীদের খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হয় না।
দেশীয় সিমেন্ট উৎপাদনে থাকা ৩৪ কারখানার বার্ষিক স্থাপিত উৎপাদন সক্ষমতা ৭ কোটি ৩০ লাখ টন। তবে কার্যকর উৎপাদন ক্ষমতা কিছুটা কম। যদিও দেশে চাহিদা ততটা নয়। এ কারণে সিমেন্ট কারখানাগুলো উৎপাদন সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করতে পারে না। ২০১৮ সালে দেশে ৩ কোটি ১৩ লাখ টন সিমেন্ট বিক্রি হয়েছে। সিমেন্টের বাজারের আকার প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। দেড় দশক আগে সিমেন্ট রফতানির দ্বার খুললেও সেটি খুব বেশি এগোতে পারেনি। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মাত্র ১ কোটি ৪ লাখ ডলারের সিমেন্ট রফতানি হয়েছে। বাংলাদেশী সিমেন্ট মূলত ভারতে যায়। আসামের বেশকিছু বড় প্রকল্পে ব্যবহৃত হয়েছে বাংলাদেশী সিমেন্ট।
সিমেন্টের বৈশ্বিক বাজারের আকার বর্তমানে অনেক বড় হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিমেন্ট খাতের পোর্টাল সেমনেট ডটকম প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্বে ৫১২ কোটি ৯০ লাখ টন সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়। ওই বছর সিমেন্ট উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল ৭১২ কোটি ৭০ লাখ টন। সিমেন্টের বাজারের আকার ছিল ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা। প্রতি দুই বছর পরপর বিশ্বের সিমেন্ট খাতের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে এ সমীক্ষা প্রকাশ করে তারা। সিমেন্ট ব্যবহারে শীর্ষে রয়েছে চীন। এরপরের অবস্থান ভারতের।
মাথাপিছু বার্ষিক সিমেন্ট ব্যবহারে যদিও বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে, তার পরও সামগ্রিক সূচকে বিশ্বে সিমেন্ট ব্যবহারে বাংলাদেশের অবস্থান ওপরের দিকেই থাকে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সিমেন্ট ব্যবহার হয় চীনে, যা মাথাপিছু ১ হাজার ৮০০ কেজি। প্রতিবেশী ভারতে মাথাপিছু ৩২০ কেজি এবং মিয়ানমারে ২৮০ কেজি। সেই হিসেবে মাথাপিছু মাত্র ২০০ কেজি সিমেন্টের ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তালিকার নিচের দিকে। আয়তনের হিসেবে আমাদের এ ছোট্ট দেশের বার্ষিক চাহিদা প্রায় সাড়ে তিন কোটি টন।
বর্তমানে কাঁচামাল আমদানিতে আকস্মিক সম্পূরক শুল্ক আরোপ ও অতিরিক্ত অগ্রিম করারোপ, জ্বালানি সংকট, পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি ও ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধিসহ নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত দেশের সিমেন্ট শিল্প। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে সিমেন্টের মূল্যের ওপর। এছাড়া কোনো কোনো উৎপাদনকারীর নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা থাকলেও গ্যাস সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। দেশের নির্মাণ শিল্পের স্বার্থে সরকার যদি সিমেন্ট শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা করে, সিমেন্ট হতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম রফতানি পণ্য। যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিপ্লব ঘটাতে পারে।
সিমেন্ট তৈরির প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকার। এর পুরো চাহিদা পূরণ করতে হয় আমদানির মাধ্যমে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সর্বোচ্চ রাজস্ব আহরণকারী আমদানি পণ্যের অন্যতম ক্লিংকার। এর পাশাপাশি জিপসাম, লাইমস্টোন ও ফ্লাই অ্যাশের মতো কাঁচামালও বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে দেশে ক্লিংকারের আমদানি কমেছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ লাখ ২৩ হাজার ৯৯২ টন বা ১১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে দেশে ক্লিংকার আমদানি হয়েছে ৬৫ লাখ ৬৫ হাজার ৬৯৩ টন, যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৭৩ লাখ ৮৯ হাজার ৬৮৫ টন।
ক্লিংকারের আমদানি কমে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে কোম্পানিগুলোর উৎপাদন কমেছে। পাশাপাশি কাঁচামাল আমদানির জন্য ব্যাংকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। মূল্যস্ফীতির চাপ থাকায় নির্মাণকাজ কম হচ্ছে। আবাসন খাতে ফ্ল্যাটের বিক্রি কমেছে। ডলার সংকট, এলসি খুলতে না পারা এবং কাঁচামাল আমদানিতে ‘শুল্ক বৃদ্ধির’ কারণে দেশে সিমেন্টের দাম কমছে না। ডলার সংকটে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে দেশের নির্মাণ খাতে। রড, সিমেন্টসহ সব ধরনের নির্মাণসামগ্রীর দামও বেড়েছে।
এর মধ্যে খুচরা পর্যায়ে সিমেন্টের ৫০ কেজির বস্তার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২৫-৫৫০ টাকা, আগস্টেও যা ৫০০ টাকার নিচে ছিল।
এলসি খুলতে না পারায় আমদানি করা যাচ্ছে না সিমেন্টের প্রধান কাঁচামাল (ক্লিংকার, লাইমস্টোন ও জিপসাম)। এলসি খোলার জন্য ব্যাংকের কাছে গেলে বলে ডলার সংকটের কারণে তারা ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে আগে এলসি খোলার জন্য আমাদের মার্জিন দিতে হতো ৫ শতাংশ। যাদের করপোরেট ইমেজ আছে, তারা জিরো মার্জিনেও করতে পারত। কিন্তু এখন ২০ শতাংশ পর্যন্ত মার্জিন দিতে হচ্ছে। এছাড়া ডলারের পেছনে স্বাভাবিকভাবে ২০ শতাংশ বেশি পুঁজির দরকার হচ্ছে।
এসব কারণে সিমেন্ট খাতে দুই বছর ধরে চাহিদা কমেছে। আগে সিমেন্টের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ শতাংশের মতো। কিন্তু দুই-তিন বছরে এটা ১ শতাংশ করে কমেছে। তবে আশার কথা আবারো মুনাফায় ফিরেছে দেশের সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলো। কোনো কোনো কোম্পানির মুনাফা কয়েক গুণ বেড়েছে। সম্প্রতি কোম্পানিগুলোর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, তালিকাভুক্ত সাতটি সিমেন্ট কোম্পানির মধ্যে পাঁচটির মুনাফা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। ২০২২ সালে ডলারের অস্বাভাবিক বিনিময় হারের কারণে কোম্পানিগুলো যে লোকসান করেছিল, গত বছর সেই লোকসান কমেছে। আবার শতভাগ মার্জিনে ঋণপত্র খোলায় ডলারের দামের হেরফেরের চাপও কমেছে।
দুটি কারণে সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলো ব্যবসায় ভালো করেছে। প্রথমত, ২০২২ সালের শেষার্ধে ডলারের যে অস্বাভাবিক বিনিময় হার ছিল, সেই ধাক্কা অনেকটা আত্তীকরণ করে ফেলেছে কোম্পানিগুলো। দ্বিতীয়ত, কাঁচামাল সংকটের কারণে ছোট-বড় কিছু কোম্পানির উৎপাদন সক্ষমতা কমে যাওয়ায় সেই বাজার দখল করেছে অন্যরা। তাতে যাদের উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল, তাদের বিক্রি বেড়েছে। এছাড়া ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে পণ্যের দামও বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো। সেই সুফলও মিলছে এখন।
আকিজ সিমেন্টে প্রতিনিয়ত আধুনিকায়নে নজর দিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছি। যাত্রার শুরু থেকেই আকিজ সিমেন্টের মূল উদ্দেশ্য ছিল পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখা। তারই ধারাবাহিকতায় ক্লিংকারের পাশাপাশি ব্যবহার হয় শক্তি অর্জনে সক্ষম ব্লাস্ট ফার্নেস স্ল্যাগ। ক্লিংকার, লাইমস্টোন, জিপসাম ও ব্লাস্ট ফার্নেস স্ল্যাগের সঠিক মাত্রার মিশ্রণ ও বিক্রিয়ার ফলে বাড়তি জেল তৈরি হয়, যা কংক্রিটের দীর্ঘস্থায়িত্বতা বাড়ায় এবং ঢালাইকে দেয় লোহার শক্তি। ব্লাস্ট ফার্নেস স্ল্যাগ যুক্ত আকিজ সিমেন্টে তৈরি কংক্রিটে হিট অব হাইড্রেশন কম থাকে, যা ম্যাস কংক্রিটে ফাটলের ঝুঁকি কমায় এবং স্থাপনাকে দেয় দীর্ঘস্থায়িত্বতা। স্ল্যাগের রাসায়নিক গঠন অনেকটা ক্লিংকারের মতোই। স্ল্যাগেরও শক্তি অর্জন ও বৃদ্ধির সক্ষমতা থাকার কারণে এটি কাঁচামাল হিসেবে আকিজ সিমেন্ট উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ সিমেন্টের তুলনায় অন্তত ১৫ শতাংশ অতিরিক্ত শক্তি নিশ্চিত করে। ফ্লাই অ্যাশের পরিবর্তে ব্লাস্ট ফার্নেস স্ল্যাগ ব্যবহৃত হয় বলে আকিজ সিমেন্টে নির্মিত স্থাপনাগুলো দেখতে হয় ধূসর ও সাদা। স্থাপনাকে দেয় ফেয়ার-ফেস ফিনিশিং ও মসৃণতা। এছাড়া স্ল্যাগ যুক্ত আকিজ সিমেন্ট স্টিলের ক্ষয় প্রতিরোধ করে এবং কংক্রিটের পানি শোষণ ও সঞ্চলন রোধ করে। আকিজ সিমেন্ট সবসময় গুণগত মান বজায় রাখে বলে বাজারে আলাদা চাহিদা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
দেশে সিমেন্ট শিল্পও অপেক্ষাকৃত দ্রুত বিকাশমান শিল্প হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। সিমেন্ট খাত এমন একটি শিল্প, যেখানে অল্প বিনিয়োগে প্রযুক্তি সহায়তা পাওয়া যায় না। পাশাপাশি বৃহৎ ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বিনিয়োগ না হলে উৎপাদন খরচ নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব। এ শিল্প লজিস্টিকনির্ভর, যা নৌ ও সড়কপথের ওপর নির্ভরশীল। এ খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৯০ লাখ লোকের রুজি-রোজগার হয়। সুতরাং ত্রুমবর্ধমান শিল্প হিসেবে সরকারের উচিত সিমেন্ট শিল্পের উন্নয়নে আরো নজর দেয়া।