ভবন নির্মাণ ও মান নিয়ন্ত্রণ
(৩য় পর্ব)
প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান, পিইঞ্জ
টেকসই ও গুণগতমানসম্মত একটি ভবনের নির্মাণকাজ বাস্তবায়নকালে যেসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা দরকার, তার প্রতিটির আলাদা আলাদাভাবে মান নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে নির্দিষ্ট কিছু নিয়মনীতি আছে, যা মেনে চলা অত্যাবশ্যক। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রধান যে চারটি বিষয়ের ওপর নির্মাণকাজের সার্বিক মান নির্ভর করে, তার প্রতিটিই একটি অপরটির সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। ফলে, এই বিষয়গুলোর প্রতিটি ক্ষেত্রেই মান নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে কোনো রকম অবহেলা দেখানো সমীচীন নয়, লক্ষণীয় বিষয়গুলো হচ্ছে:
- মালামাল সংগ্রহ করা
- যন্ত্রপাতির জোগান দেওয়া
- লোকবল নিয়োগ দেওয়া এবং
- কাজের পদ্ধতিসমূহ মেনে চলা।
মালামাল
একজন প্রকৌশলীর ভাষায়, নির্মিতব্য একটি ভবনের সব কাজকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা হয়, যার প্রতিটির জন্য মালামাল, যন্ত্রপাতি, লোকবল এবং কর্মপদ্ধতির ধরন আলাদা আলাদা এগুলোর কার্যপরিধি ও প্রয়োজনীয় মালামালের বৈশিষ্ট্য। ফলে, নির্মাণকাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্মিতব্য একটি ভবনের সব কাজকে যে চারটি ভাগে ভাগ করা হয় তা হলো:
১. সিভিল
২. স্যানিটারি
৩. ইলেকট্রিক্যাল
৪. মেকানিক্যাল।
সিভিল
সাধারণত, একটি ভবনের সম্পূর্ণ স্ট্রাকচার বা কাঠামো (তা হতে পারে কংক্রিট স্ট্রাকচার, ব্রিক স্ট্রাকচার কিংবা কম্পোজিট স্ট্রাকচার) নির্মাণ করা এবং তার ফিনিশিং দেওয়া সংক্রান্ত সব কাজকে সিভিল কাজ হিসেবে বোঝানো হয়। এসব কাজের জন্য যেসব মালামাল ব্যবহার করা হয় তা একবারেই কাঁচামাল হিসেবে আসে। ফলে, এই কাঁচামালসমূহের গুণাগুণ এবং কর্মপদ্ধতির ওপর নির্ভর করে একটি স্ট্রাকচারের গুণগতমান ও স্থায়িত্ব।
সিভিল কাজে ব্যবহৃতব্য কাঁচামাল হচ্ছে-
উপরোল্লিখিত প্রতিটি মালামালের রয়েছে পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্য। আছে আলাদা আলাদা রক্ষণাবেক্ষণের পদ্ধতি। ফলে, ভবন নির্মাণের জন্য আনীত সব মালামালের সার্বিক গুণগতমান রক্ষা করার জন্য সর্বক্ষেত্রে নির্ধারিত বৈশিষ্ট্যগুলো যাচাই করে নেওয়া এবং সুষ্ঠুভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা অতীব জরুরি একটি বিষয়।
ইট
প্রস্তুত প্রণালি ও গুণাগুণ বিশ্লেষণে ইটের প্রকারভেদ রয়েছে-
ক. প্রস্তুত প্রণালি অনুসারে ইট দুই প্রকার:
১. মেশিনে প্রস্তুত করা ইট এবং
২. হাতে প্রস্তুত করা ইট।
খ. গুণাগুণ বিশ্লেষণে উভয় প্রকার ইটকেই আবার চার ভাগে ভাগ করা হয়;
১. পিক্ড ঝামা সংক্ষেপে পিকেট ইট
২. ফার্স্ট ক্লাস ইট
৩. সেকেন্ড ক্লাস ইট এবং
৪. থার্ড ক্লাস ইট।

প্রসঙ্গত, যেকোনো ভবন নির্মাণের জন্য উভয় প্রণালিতে প্রস্তুতকৃত ইটই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ইটের গুণাগুণভেদে শুধু খোয়া তৈরি করতে পিকেট ইট ব্যবহার করা হয়। দেয়াল গাঁথুনির জন্য ফার্স্ট ক্লাস এবং তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ কাজের অবস্থাভেদে সেকেন্ড ও থার্ড ক্লাস ইট ব্যবহৃত হয়। উল্লেখ্য, ভবনের বাইরের দেয়াল কিংবা লোড বিয়ারিং দেয়ালে গাঁথুনি করার জন্য কোনোভাবে সেকেন্ড বা থার্ড ক্লাস ইট ব্যবহার করা উচিত নয়।
পিক্ড ঝামা সংক্ষেপে পিকেট ইট
ওভার বার্ন্ট কিন্তু ভিট্রিফাইড নয়, এমন ধরনের ইটকে পিকেট বলা হয়। এই ইট যেহেতু কংক্রিট ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহৃত খোয়া তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়, তাই শুধু সেইফ-সাইজ ছাড়া একটি ফার্স্ট ক্লাস ইটের জন্য প্রযোজ্য অন্য গুণাবলি সঠিক থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার। ইট তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত মাটি ও বালুর গুণগতমান, সঠিকভাবে মোল্ডিং করা, পোড়ানোসহ সব ধরনের বৈশিষ্ট্য নিশ্চিত করা জরুরি। নইলে, নিম্নমানের পিক্ট ঝামা ইটের খোয়া দ্বারা নির্মিত ভবনের গুণগতমান ও স্থায়িত্ব লোপ পায়।
চলবে…
ডিজিএম (কিউএ)
এমআর অ্যান্ড হেড অব মেইনটেইনেন্স সেকশন
দি স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স লি. (এসইএল)